এই পোস্টটি ইংরেজিতে পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন

বাংলাদেশের ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮ তে দেখা যায় যে দেশের মাত্র শতাংশ স্কুলে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা  নিয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়।  বাকি স্কুলগুলোয় শিক্ষকরা এই বিষয়ে কথা বলা অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যান। গার্হস্থ্য অর্থনীতি বইয়ের এই সম্পর্কিত চ্যাপ্টারটি নিয়ে বলা হয়, “বাড়ি থেকে পড়ে এসো!” একই সার্ভেতে আরো দেখা যায় যে মাত্র ৫৩ শতাংশ স্কুলছাত্রী মাসিকের ব্যাপারে অবগত। অর্থাৎ প্রায় ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজের প্রথম মাসিক হওয়ার আগ অব্দি মাসিক নিয়ে জানেই না। আর যারা জানে—তারাও সঠিক তথ্য জানে না। যতটা সত্যি, তার সাথে যুক্ত থাকে ততটা, বা তার চেয়ে বেশি কুসংস্কার।  

কিশোরীদের বাইরে গেলেও মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা নিয়ে, হোক তা শহর কিংবা কোনো প্রান্তিক অঞ্চল, জরিপের ফলাফল কখনই সুখকর তথ্য প্রদান করেনি। ২০০৮ সালে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের একটি বেসলাইন স্টাডিতে জানা যায়, ঢাকার বস্তিতে থাকা ৯৫ শতাংশ নারী মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করেন। তারও বছর দশেক পরে, ২০১৮ সালে মাসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি কিশোরী ও নারী মাসিকের সময় এখনো কাপড় ব্যবহার করে। তাদের অনেকে একই কাপড় বারবার ব্যবহার করে যার অধিকাংশই অপরিষ্কার কাপড়। কিশোরীদের মাত্র ১০ শতাংশ এবং বয়স্ক নারীদের ২৫ শতাংশ মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা স্বাস্থ্যসম্মত প্যাড ব্যবহার করে। এর পেছনে বিভিন্ন সময় প্যাডের উচ্চ মূল্য, প্যাডের অনুপলব্ধতা, সচেতনতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করা হলেও এই নিয়ে কাজ হয়েছে নামেমাত্র। 

শহরের স্কুল কিংবা বস্তিতেই যখন মাসিকস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা আর ব্যবহারযোগ্য ওয়াশরুমের অভাব, তখন দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীগুলোর নারীদের কেমন অবস্থা তা বলার বাকী রাখে না৷ দিনে ৮ ঘন্টা কাজ করা নারী চা-শ্রমিকরা কিংবা নৌকায় বসবাস করা বেদে সম্প্রদায়, যাদের নেই কোনো যথাযথ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) ফ্যাসিলিটিজ তারাই কীভাবে মাসিকের সময় কোনো স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম মানতে পারে? 

মাসিক এখনও বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই একটি সামাজিক ট্যাবু হয়েই রয়েছে। ফলে নারীদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যান্সার, সংক্রমণ, যৌনাঙ্গে ঘা, চুলকানি, অস্বাভাবিক সাদা স্রাব প্রভৃতি শারীরিক সমস্যার। দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর দেশে প্রায় ১২ হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং সঠিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমেই কেবল আমরা এই ট্যাবু ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে পারি।

তথ্যসূত্র :

১.https://bbs.portal.gov.bd/sites/default/files/files/bbs.portal.gov.bd/page/b343a8b4_956b_45ca_872f_4cf9b2f1a6e0/2021-02-18-12-34-38806de91fa4ca8d9e70db96ecff4427.pdf

২.https://fr.ircwash.org/sites/default/files/Ahmed-2008-Menstrual.pdf

৩.https://shorturl.at/joqxV 

৪.https://www.tandfonline.com/doi/full/10.1080/13691058.2019.1580768 

৫.https://shorturl.at/dxzWY

পোস্টটি লিখেছেন ফারিয়া রহমান, তিনি আনচার্টেড রেড ওয়াটার্স প্রজেক্টের একজন টিম মেম্বার।