Source: e-khaborerkagoj

মাসিক-সমতা নিশ্চিতে প্রান্তিক গোষ্ঠীসমূহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা নিতে হবে

ঋতুস্রাবকালীন নানা জটিলতায় ভুগছেন দেশের নারী ও কন্যাশিশুরা। সঠিক তথ্যের অভাবে ও পারিবারিক-সামাজিক নানা প্রথা-কুসংস্কারে প্রান্তিক নারীদের ঋতুস্রাবের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। অর্থাভাব, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার, স্যানিটারি ন্যাপকিনের অপ্রতুলতায় এখনও তারা সেই চিরায়ত প্রথাই বেছে নেন। এতে নারীর স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে।

সম্প্রতি রাজবাড়ির দৌলতদিয়ার যৌনকর্মী, মিরপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিশোরী, শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিক এবং মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় বেদে সম্প্রদায়ের নারীদের ওপর সমীক্ষা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (জিবিএফ)। জিবিএফের ‘আনচার্টেড রেড ওয়াটারস’-প্রকল্পের আওতায় নারীর মাসিক, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে উঠে এসেছে নানা তথ্য। গত ৭ ডিসেম্বর, শনিবার ঢাকার আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মাসিক সমতা: নীতি ও কর্মসূচির আলোকে’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে সেই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এই প্রকল্পের গবেষকরা।

শেয়ার-নেট ইন্টারন্যাশনালের ‘নলেজ এক্টিভিশন গ্র‍্যান্ট-২০২৪’ অর্জনের পরে ‘আনচার্টেড রেড ওয়াটারস’-প্রকল্প দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারের (এসআরএইচআর) বিষয়গুলো নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এই প্রকল্পটি দুইটি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়েছে, নির্বাচিত এই প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর নারীদের মাসিক সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে এবং ২০২১ সালে প্রবর্তিত ‘জাতীয় মাসিক স্বাস্থ্য কৌশল’কে জোরদার করার পাশাপাশি নারীর ঋতুস্রাবকালীন তথ্য ও জ্ঞান বৃদ্ধির কাজটি করেছেন গবেষকরা। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে প্রান্তিকের দাবিগুলো যেন যথাযথ বাস্তবায়িত হয়; তারও প্রচেষ্টা করছে গিভ বাংলাদেশ।

শনিবারের বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি), স্কয়ারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চার জন নারী তাদের ঋতুস্রাবকালীন সংকটের কথা বলেন এই সভায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের অ্যালামনাই উপমা রশিদ।

 

#ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান

পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

আমাদের ভিশন এখন এত বড় হয়ে গেছে, এত বড় বড় মিশন করতে গিয়ে আমরা মানবিক অনেক বিষয় মিস করে যাচ্ছি। হাসপাতালে সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট, এমআরই মেশিন নষ্ট, এগুলো নিয়ে সংবাদপত্রে খবর আসে। কিন্তু নিউজ আসে না যে অল্প খরচের স্যানিটারি ন্যাপকিনই আমরা দিতে পারছি না। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ। কেন ব্যর্থতা– এটা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ আছে। আমাদের মেনস্ট্রুয়াল হেলথ নিয়ে সবসময় কাজ হয়। কতটুকু ফলাফল আমরা দিতে পেরেছি, এটা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে।

উপজেলা পর্যায়ে যারা স্বাস্থ্য সহকারী কিংবা হেলথ ইন্সপেক্টর আছেন, তাদের বলা হয়েছে মাসে অন্তত ১০টি স্কুলে তারা প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সেশন নেবে। চিকিৎসকদের সেশন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যাংক চালু করা হয়েছে। তবে এর সাফল্য কতটা আছে এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আমাদের সমাজে এখনও অনেক ট্যাবু আছে। আমরা নিজেরাই অনেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। যৌনপল্লীতে কাজ করতে গিয়ে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে, যৌনকর্মীরা আমাদের কাছে যে চিকিৎসা নিতে আসবে, সেখানে বাঁধা পাচ্ছে। সব বাঁধা সরকারের আইন দিয়ে, ক্ষমতা দিয়ে বা টাকা দিয়ে দূর করা যায় না। সেক্স ওয়ার্কার, চা-শ্রমিক, বেদে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী- সবার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য আলাদা আলাদা করে ভাবতে হবে। সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়ার অর্থ হল, আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাওয়া। 

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা অনেক কিছু ফ্রি দিচ্ছি। ওষুধ, ইনজেকশন, ভ্যাকসিন ফ্রি দিচ্ছি। আমি মনে করি, এর মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনটাও ইনক্লুড করা যায়- সর্বমহল থেকে এমন প্রস্তাবনা পেলে আমরা (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) মুভ করতে পারি। মেডিক্যাল এন্ড সার্জিক্যাল রিকুইজিট (এমএসআর) প্রক্রিয়ায় স্যানিটারি ন্যাপকিন নেই। এখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন ইনক্লুড করতে পারি। ছোট ছোট পলিসি ইমপ্লিমেন্ট করা যায়। আমরা যদি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য ন্যাপকিন দিতে পারি, তবে এই রোগী বাসায় গিয়েও তা ব্যবহার করতে চাইবে।

 

#মাহবুব-উল-আলম 

অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ 

আইসিডিআর বি 

২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয়, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুজন প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষক থাকবেন; যারা মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় দেখভাল করবেন। ওই সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। মেনস্ট্রুয়াল হেলথ অ্যান্ড হাইজিন ম্যানেজমেন্ট (এমএইচএম) প্ল্যাটফর্মে আমরা যারা কাজ করছি, তারা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করেছি। 

হাইজিন ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল স্যানিটারি ন্যাপকিন। কিন্তু সেটাকে ফ্যান্সি পণ্য হিসেবে দেখিয়ে ইমপোর্ট ট্যাক্স হিউজ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় প্রক্রিয়া নিয়ে সবাই কথা বলা শুরু করি। সরকার ভ্যাট ও ট্যাক্স কিছুটা কমিয়ে আনে। আমরা চাই জীবন রক্ষাকারী এই পণ্যটির ওপর আদৌ কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স না থাকুক। তাহলে এটার দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে।

আর দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের পরে সেটি হাসপাতাল বর্জ্য নাকি বাসা বাড়ির বর্জ্যের সাথে ভাগাড়ে যাবে, সেই ব্যবস্থাপনা কিন্তু হয়নি- সার্বিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংক্রান্ত সিরিয়াস চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। আর পরিবেশবান্ধব যে স্যানিটারি প্যাডের কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে কত জন কিনতে পারবে প্রশ্ন আছে। পরের বিষয় হল ঋতুকালীন সময়ে পুরুষদের অংশগ্রহণ। বাড়ির পুরুষ সদস্যরাই কিন্তু অধিকাংশ সময়ে সিদ্ধান্ত নেন, তার ঘরের নারীকে স্যানিটারি প্যাড কিনে দেবেন কিনা, সেজন্য আলাদা বাজেট রাখবেন কি না।

 

#ড. ফারহানা হক

কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর- শেয়ারনেট 

ডিরেক্টর, হেলথ কমিউনিকেশন- রেড অরেঞ্জ

আমাদের এখন আসলে দরকার মেনস্ট্রুয়াল ইকুইটি, হাইজিন নলেজ। মেনস্ট্রুয়াল হাইজিনের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রমোট করছি আমরা। কিন্তু কেন? আমাদের সবসময় দরকার নেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের। সবার তো স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার ক্ষমতা নাই। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করে কিভাবে মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন মেইনটেইন করবেন, সেটা জানতে হবে। আপনি কাপড় ব্যবহার করেন। কিন্তু সে কাপড় কিভাবে পরিষ্কার রাখবেন, কিভাবে ধোবেন, কিভাবে শুকাতে হবে-সব কিছু জানতে হবে। তাছাড়া স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পরে কোথায় ফেলব সেটিও জানতে হবে। প্রতিবন্ধী নারীদের বিষয়ে এখানে কথা এসেছে। আমি দেখেছি, হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের অনেক অবহেলা করেন। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। 

 

#ডা. মেহবুবা নূর প্রথা 

ডিস্ট্রিক্ট এসআরএইচআর অফিসার

ইউএনএফপিএ’স সাপোর্ট টু ফোর্থ এইচপিএনএসপি থ্রু ডিজিএইচএস

 

আমাদের প্রকল্পে সাধারণত সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ নিয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। আমরা মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নরমাল ডেলিভারির হার বাড়াতে কাজ করছি। তবে এই সেমিনারে এসে আমার উপলব্ধি হল, নারীর ঋতুস্রাবকালীন স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে আমাদের কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা হাসপাতালে এডোলেসেন্ট কর্নার বা ভায়া কর্নার আছে। সেখানে ওয়ান টাইম স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একটু এগিয়ে আসতে হবে যেন হাইজিনকে আরো ফোকাস করা যায়। তারা সহযোগিতা করলে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার তথ্যগুলো বিশদ পরিসরে আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারি। এখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্যার আছেন, মেডিক্যাল এন্ড সার্জিক্যাল রিকুইজিট (এমএসআর) এর কথা স্যার বললেন- আমারও অনুরোধ থাকবে এমএসআরে স্যানিটারি ন্যাপকিনের সাপ্লাই যেনো নিশ্চিত করা যায়। ডিস্ট্রিক্ট এসআরএইচআর অফিসার হিসেবে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করার।

 

#তেহসিনা খানম 

অ্যাসিস্টেন্ট মার্কেটিং ম্যানেজার

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড 

দেশের ৮০ শতাংশ মেয়ে এখনও স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারে না। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আমাদের আলাদা ব্যবস্থাপনা নিতে হবে। আরেকটা কথা বলব, আমাদের দেশে বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড বিতরণ কোনো সমাধান বয়ে আনবে না। দেশের অনেক মানুষ মনে করেন, ফ্রি প্রোডাক্ট পেলে সেটা খুব ইমপরট্যান্ট না। স্কয়ারের ব্র্যান্ড সেনোরা প্যাড লঞ্চ করেছে যেটা ৬ মাস পরে বায়োডিগ্রেডিবেল, তবে সেটাও আমরা বড় পরিসরে বাজারজাত করতে পারছি না। দামটা একটু বেশি বলে সেটা নারীরা কিনতে পারবে কি না সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এখানে আসলে সরকার, প্রাইভেট সেক্টর সবাইকে নিয়ে একটা নীতি নির্ধারণ করতে হবে। 

 

#আবদুল জব্বার  

ডেপুটি প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর

ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ

আমরা কাজ করছি খুলনার ডুমুরিয়া অঞ্চলে।  সেখানে ২০০০ মেয়ের ওপর জরিপ করে জানলাম, ৭৫ শতাংশের বেশি শিশু বলেছে, তারা বেশ ভয় পেয়েছে বা এ ব্যাপারে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ছে। কেউ কেউ বলেছে, আমার মনে হয় ক্যানসার জাতীয় কিছু হয়েছে। 

গভর্নমেন্ট সার্ভে, আপনাদের স্টাডি, সব কিছু এটাই বলে, এখানে মেন্সট্রুয়াল এডুকেশন নাই। এডুকেশন এর জায়গাটা খুব জরুরি। ছোটো ছোটো ক্যাম্পেইন বা সেশন দিয়ে লার্জ স্কেলে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারটি নিশ্চিত করা কঠিন। নির্দিষ্ট একটি ডিপার্টমেন্টকে এর দায়িত্ব দেয়া আছে, আমাদের উচিৎ তাদের একাউন্টেবল করা। আমার মনে হয় আমরা যদি এডুকেশন লেভেল বাড়ানোতে বেশি ফোকাস করি, তারপর পর্যায়ক্রমে অন্য সমস্যা সমাধানে কাজ করি তাহলে আরো বেশি ফলপ্রসূ আলোচনা করতে পারবো।

 

#সাদিয়া তাসনিম 

এক্সিকিউটিভ অফিসার

হাউজ অফ ভলান্টিয়ার্স বাংলাদেশ

আমরা এখন কাজ করছি ঢাকার অভ্যন্তরে এবং ঢাকার বাইরে খুলনার লবণাক্ত এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে। লবণাক্ত এলাকার অধিকাংশ কিশোরী বলছে, তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হলেও তারা পরিষ্কার পানির অভাবে হাইজিন মেইনটেইন করতে পারছে না। আমরা অনেক কিশোরীকে প্যাড দেওয়ার এক বছর পরে ফলো আপ সেশনে গিয়ে দেখলাম, তারা একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে গোটা প্যাকেটটা রেখে দিয়েছে। কারণ, দরিদ্রতার কারণে তারা পরবর্তীতে আর কোনো স্যানিটারি ন্যাপকিন বক্স কিনতে পারেনি। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন আয়োজন এর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান শর্ত দিচ্ছেন, যেনো শুধুমাত্র মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যই সেশন আয়োজন করা হয় এবং কোনো ছেলে স্বেচ্ছাসেবক না রাখা হয়। অথচ হাইজিন ইস্যুতে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের অন্তর্ভুক্তিও ভীষণ জরুরি। এক্ষেত্রে, কারিকুলামে যদি মেন্সট্রুয়াল হাইজিন কে অন্তর্ভুক্ত করা যায় হয় তবে ছেলেদের অন্তর্ভুক্তিও নিশ্চিত হবে।

 

#সালমা আহমেদ

প্রজেক্ট ম্যানেজার,  সাজিদা ফাউন্ডেশন

প্রতিনিধি, বাংলাদেশ এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম এবং আরবান ওয়াশ প্ল্যাটফর্ম

 

আমাদের প্রজেক্ট থেকে বেশ কয়েকটি স্কুলে ভেন্ডিং মেশিন দিয়েছি। এতে করে মেয়ে শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। মেশিনে টাকা রিচার্জ করলে একটা করে স্যানিটারি ন্যাপকিন বের হয়ে আসছে। পরদিন তারাই আবার নতুন একটি ন্যাপকিন কিনে আনছে, সাবান কিনে আনছে। তাতে স্কুলগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। চেষ্টা করছি, গ্রাম এলাকাগুলোতে নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম বিস্তৃত করতে। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আছেন, যাদের দোকানের পাশে ছোট ছোট হাইজিন কর্নার আছে। তারা ফোনকলে নারীর মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন রিলেটেড পণ্যগুলো কিনে নিচ্ছেন। সিংগেল পিস প্যাড কেনার সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে আমরা এফোরডেবিলিটি এবং এক্সেসিবিলিটি নিশ্চিতকরণে সহায়তা করতে পারি। এরকম আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে। কমিউনিটি লেভেলে সেন্সিটাইজেশনে একটা নির্দিষ্ট লেভেলে আছি কিন্তু অ্যাডভোকেসি বা ব্যুরোক্রেসি লেভেলে আরো কাজ করার সুযোগ আছে।

#গ্লোরিয়া চন্দ্রাণী বাড়ৈ 

অধ্যক্ষ

ব্যাপটিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল

দেশের নানা প্রান্তে শিক্ষা আর নারী স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। আমি দেখলাম, প্রতিবন্ধী মেয়েদের কেউ গোণার মধ্যে আনছে না। অভিভাবকরা সামনে আসতে দিতো না প্রতিবন্ধী শিশুদের। ব্যাপিস্ট মিশন ইনটিগ্রেটেড স্কুলে শিক্ষার্থীদের অল্পবিস্তর কিছু সুবিধা দিতে পারছি। মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটা স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যাংক স্থাপনের কথা বলেছিলাম। কিন্তু সেখানে আর্থিক সংকট আছে। নীতিনির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ এ বিষয়ে যেন একটু কাজ করেন। আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ কিশোরীদের অ্যাওয়ার করার পাশাপাশি তাদের পরিবারদের নিয়েও একটু বসেন এবং অ্যাওয়ার করেন। 

 

#সালমা মাহবুব 

সেক্রেটারি জেনারেল

বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেইঞ্জ এন্ড এডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান)

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত কনভেনশন-সিআরপিডিতে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিশুদের বিষয় নিয়েও আলাদা করে অ্যাড্রেস করা আছে। কিন্তু এই আমাদের প্রতিবন্ধীবিষয়ক আইনে আলাদা করে প্রতিবন্ধী নারীর কথা উল্লেখ করা হয়নি। নারীর চাহিদা নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেউ কাজ করছে না। হাইজিন ম্যানেজমেন্ট যে স্ট্র্যাটেজিটা করেছি সেখানে রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধী নারীদের। তাদের প্রতিনিধিত্ব কি সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে? যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের এই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবেন, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে নীতি বাস্তবায়নের সময় জানতেই পারবে না আসলে কী করতে হবে।

প্রতিবন্ধী নারীদের মেনস্ট্রুয়াল হেলথ অ্যান্ড হাইজিন ম্যানেজমেন্ট-এমএইচএম নিয়ে কাজ করছে এরকম কয়টা প্রকল্প আছে? খুব কম। সাধারণ নারীদের মধ্যে যদি কখনও ফাকফোঁকড়ে আমরা ঢুকতে পারি। এভাবে তো হবে না। এখানে আলাদা আলাদা কমিউনিটিকে এড্রেস করতে হবে। পলিসিতে আমাদের কথা থাকলেও তা ইমপ্লিমেন্টেশন এর দিকে নজর দিতে হবে। সিআরপিডির স্টেপগুলো গুরুত্ব দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রইলো।

 

#আতাউর রহমান মঞ্জু

প্রোগ্রাম ডিরেক্টর

মুক্তি মহিলা সমিতি (এমএমএস) 

যৌনপল্লীগুলোতে এখন অনেক হাতুড়ে ডাক্তার ব্যবসা পেতে বসেছে। তাদের কোনো সনদ নেই। সরকারেও নজরদারি নেই সেখানে। জেলা সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে এই বিষয়ে একটি সরেজমিন তদন্ত করা দরকার। যৌনপল্লীতে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। আর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দেখা যায়, সেবা পাওয়া যায় সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। বাকিটা সময় সেবা কোথায় পাওয়া যাবে? এসব বিষয়ে নজর দিলে যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব।

 

#বর্ষা আহমেদ 

প্রজেক্ট ম্যানেজার, প্রজেক্ট কন্যা

প্রজেক্ট কন্যা মূলত কাজ করছে কমিউনিটি বেইজড সলিউশন নিয়ে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের স্কুলে বয়:সন্ধিকালীন তরুণীদের বোঝাতে চাইছি, ঋতুস্রাব একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। আমরা যখন গাইবান্ধার চরাঞ্চলে কাজ করতে গেলাম সেখানে স্যানিটারি প্যাডের সরবরাহ নেই, চরাঞ্চলে ফার্মেসিই খুব সীমিত। তার মানে ভূ প্রকৃতিগত অবস্থান, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট তাকে স্যানিটারি প্যাড কেনার মতো সুযোগ দিচ্ছে না। সেখানে আমরা কাপড় কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমাদের মডিউলে হাইজেনিক ওয়ে তে কাপড় ব্যবহার এবং স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার, দুটিই  সলিউশন হিসেবে রাখি। সেক্সওয়ার্কার দের নিয়ে কাজ করতে গেলে তাদের মাঝে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা পিরিয়ড কালীন সময়ে ক্লায়েন্ট গ্রহণ করলে দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হবে সেই বিষয়ে আলোচনা করি। আবার বান্দরবানের থানচিতে যখন কাজ করতে গেলাম, আমাদের ভাষা ম্রো মেয়েরা বুঝতে পারছিলো না। এমএইচএম সেশনে পরে আমরা দুজন আদিবাসী মেয়েকে যুক্ত করলাম যারা বাংলা ভালো বুঝে। প্রজেক্ট কন্যায় অ্যাওয়ারনেস তৈরিতে আমাদের মূল লক্ষ্যই থাকে কমিউনিটির প্রয়োজন সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী সলিউশন প্রদান করা। 

 

#লুদমিলা সারাহ খান

পলিসি অ্যাডভোকেসি কো- অর্ডিনেটর

গিভ বাংলাদেশ 

 

পিরিয়ডের সময় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ যে কী প্রকট হতে পারে, সেটা নিয়ে কিন্তু কোনো ধারণা নাই। এখানে বয়:সন্ধিকালীন সময়ে পিরিয়ড সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য পায় না। আমাদের ইনোভেটিভ সলিউশনের দিকে যাওয়ার সময় এসেছে। প্যাডও কিন্তু অনেক সময় অস্বস্তিকর হয় নারীদের জন্য। তাই এখন অধিকতর আরামদায়ক কোনো সলিউশনের দিকে যেতে পারি কি না সেটা ভাবা যায়। ন্যাচারাল কাপ একটা সলিউশন হতে পারে। এখন সেটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কীভাবে তাদের কাছে পরিচিত করব, কীভাবে তাদের কাছে আরও সহজলভ্য করা যায়, এখানে আমাদের আলোচনা করতে হবে। 

প্রান্তিকের নারীদের অনেকে জানেনই না যে ঋতুস্রাবকালীন সমস্যা আদৌ কোনো সমস্যা কি না, কিংবা তখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে কি না। এই তথ্যগুলো যেতে হবে প্রান্তিকের নারীদের কাছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রান্তিকের নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেন। তাই এই কর্মীদের আরও বেশি সচেতন করতে হবে, আরও বেশি প্রশিক্ষিত করতে হবে যেন তারা প্রান্তিকের নারীদের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে এখানে। আমরা বলছি, চা বাগানের নারী শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাদের কর্মস্থলের পরিবেশ আরও উন্নত করা। পাশাপাশি ঋতুস্রাবের সময় তারা নানা আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন। নারী শ্রমিকদের আর্থিক সক্ষমতা তাই বাড়াতে হবে। যৌনকর্মীদের আর্থিক সঞ্চয়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারা পিরিয়ডের সময় যৌনকর্ম থেকে দূরে থাকবেন। বেদে পল্লীতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাঠামো আরও উন্নত করা প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য অডিও ও ব্রেইল ফরম্যাটে তথ্যসেবা প্রদান করা যেতে পারে।

 

#পরিতোষ কুমার তাঁতি

প্রধান শিক্ষক, কালিঘাট চা বাগান উচ্চ বিদ্যালয়

শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

চা বাগানের মানুষ এত শিক্ষিত না। তারা অন্যদের ভাষা বা আপনাদের বইয়ের ভাষাগুলো বুঝতে পারে না। তাই নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক যে বই বা সেশন নেয়া হয়, চা বাগানের নারীরা সেসব তথ্য বুঝতে পারেন না। চা বাগানের অনেক ছেলে মেয়েরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য সেমিনার বা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করলে তারাই চা বাগানে কাজ করতে পারবে। ঢাকা থেকে গিয়ে সব সময় কাজ করা সম্ভব না সেই ক্ষেত্রে এই ছেলে মেয়েরাই কাজ করতে পারবে এবং চা বাগানের মা বোনরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাদের মনের কথা বলতে পারবে।  

চা বাগানে যে নারী শ্রমিকরা যেসব সেকশনে কাজ করেন, সেখানে ওয়াশরুম নেই, বিশুদ্ধ পানিও নাই। তাই তাদের পক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না। অনেক সময় চা বাগান থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসাও কঠিন হয়ে যায়। জরায়ু এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের হার বাড়ছে চা বাগানে। 

এর পাশাপাশি প্রচলিত শ্রম আইন চা বাগানে বাস্তবায়িত কোম্পানির দস্তুর আইনের মাধ্যমে। শ্রম আইনের প্রথাগুলো চা বাগানে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। চা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন, চা কোম্পানির পাশাপাশি সরকারকেও চা বাগানের নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন করে ভাবতে হবে। 

#ফারিয়া রহমান 

আনচার্টেড রেড ওয়াটারস 

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮ এর তত্ত্ব মতে দেশে মাত্র ৬% স্কুলে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পাড়ানো হয় এবং মাত্র ৫৩% নারী শিক্ষার্থী পিরিয়ড শুরুর আগে পিরিয়ডের বাপারে জানে। এটার একটা বড় কারণ স্কুলে শিক্ষকরা এই চ্যাপ্টার পড়ানো নিয়ে অস্বস্তিবোধ করেন। আর ২০১৮ সালের প্রথম আলোর সূত্রমতে দেশের ৪ কোটি নারী এখনো কাপড় ব্যবহার করে। আর ১০ % কিশোরী ও ২৫% নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। 

কিন্তু পিছিয়ে পরা কমিউনিটিতে এই সংখ্যাটা আরো কম। যেমন: চা বাগানে নারী শ্রমিকদের কোনো ওয়াশ ফ্যাসিলিটি নেই। বেদে কমিউনিটির মানুষ এখনো পরিবার নিয়ে নৌকায় থাকেন যেখানে কোন স্বাস্থ্যসম্মত কোন অবস্থা নাই। এই রকম ভাবে  যৌনকর্মী বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের অবস্থাও খারাপ। 

 

#ঝর্ণা আক্তার 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী 

অপারেশনের পর সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টি শক্তি হারানোর পর আমি বুঝতাম না পিরিয়ড টাইমে কতক্ষণ পরে প্যাড চেঞ্জ করতে হবে। তাই আর্থিক সমস্যা এবং না বুঝার কারণে লং টাইম আমি প্যাড চেঞ্জ করি না। স্কুলে থাকার সময় একটা সেশন হয়েছিলো কিন্তু ছোট থাকায় বুঝতে পারিনি কখন পিরিয়ড টাইমে কী কী করা উচিৎ বা প্যাড কতক্ষণ পর পর  চেঞ্জ করতে হবে। স্কুলে আমাদের মতো মানুষদের জন্য সেশন হলে ভালো হয়। আর প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ার কারণে ডাক্তার দেখালাম কিন্তু ঠিকভাবে লজ্জায় অনেক কিছু বলতে পারি নাই। এরপর তিনটা টেস্ট করিয়ে আনতে বলেন। কিন্তু পিজিতে গিয়ে লম্বা লাইন, সিরিয়ালের জন্য অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমার চাওয়া, আমাদের জন্য চিকিৎসার পরিবেশটুকু যেন সহজ করে দেওয়া হয়।

 

#আয়েশা আক্তার (ছদ্মনাম) 

যৌনকর্মী, দৌলতদিয়া 

পিরিয়ডের সময়ে আমরা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন সহজ কোন চিকিৎসা পাই না এবং অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারি না। ডাক্তারের কাছে যেতে লজ্জা লাগে। রোগে ভুগতে থাকি, কিন্তু সমস্যার কথা কাউকে বলতে পারি না। (দৌলতদিয়ার) মেয়েরা জরায়ুর রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

 

#সীমা রাণী 

চা শ্রমিক 

চা বাগানে অনেক সমস্যা। আমাদের ৮ ঘণ্টা ডিউটি করা লাগে। ল্যাট্রিন নেই, বাথরুম নেই । আমাদের কাপড় বদলাতে অনেক সমস্যা। আমাদের দৈনিক মজুরি ১৭৮ টাকা। এই টাকায় আমরা প্যাড কিনবো নাকি সংসার চালাবো? 

 

#ফাহিমা আক্তার 

বেদে (ভাসমান জনগোষ্ঠী) 

আমরা ৬ জন থাকতাম নৌকার ভেতরে, কোন বাথরুম নেই যে আলাদা ভাবে কাপড় চেঞ্জ করবো। যখন আব্বু বা ভাইয়া থাকে, মানে নৌকায় যখন সবাই থাকে- তখন ওই সময়টায় বলতে পারি না বাবাকে- বাবা তুমি যাও আমি চেঞ্জ করবো। আবার অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে পারি না।


আলোচনায় যা উঠে এলো-

– প্রান্তিক নারীদের কর্মস্থলের পরিবেশ মাসিক, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।
– স্যানিটারি ন্যাপকিন ও অন্যান্য মাসিক, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সামগ্রীকে সরকারি ব্যবস্থাপনার চিকিৎসা সরঞ্জামাদির প্রয়োজনীয় তালিকা (এমএসআর) প্রণয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
– সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে প্রান্তিক পর্যায়ে গোষ্ঠীভিত্তিক প্রাসঙ্গিক জ্ঞান ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।